প্রকাশিত: Mon, Dec 19, 2022 5:36 AM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 7:04 AM

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চারজন মানুষ

আহসান হাবিব: পৃথিবীতে অসংখ্য শ্রেষ্ঠ মানুষের মধ্যে ৪ জন মানুষকে আমার সর্বশ্রেষ্ঠ মনে হয়। ডারউইন, ফ্রয়েড, কার্ল মার্কস এবং আইনস্টাইন। বিবর্তনবাদ আমাদের শিখিয়েছে প্রাণের উদ্ভব ও বিকাশে বিবর্তনের গতিপথ। সক্ষমদের টিকে থাকার পেছনে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো ও লড়াইয়ের ইতিহাসের পুঙ্খানুপুঙ্খ বৈজ্ঞানিক প্রমাণ। অবচেতননের স্রষ্টা সিগমুন্ড ফ্রয়েড। আমাদের চেতনা বস্তুসাপেক্ষ। এর নির্মাণ বহিঃস্থ সংবেদ অন্তঃস্থ অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞার মিথস্ক্রিয়ায় কিভাবে তৈরি হয় এবং এর কতোটা চেতনে প্রকাশ পায় এবং কতোটা অবচেতন স্তরে জমা হয়, তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেন। তিনি এর মধ্য দিয়ে মনের বস্তুবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। কার্ল মার্কসের যুগান্তকারী আবিষ্কার হচ্ছে উদ্বৃত্ত মূল্য। এই উদ্বৃত্ত মূল্যই হচ্ছে পুঁজিবাদের প্রাণভোমরা। পৃথিবীতে এতো যে শানশওকত, তা আর কিছুই নয়, উদ্বৃত্ত মূল্যের জমাটবদ্ধ প্রকাশ।

 উদ্বৃত্ত মূল্য কি? এটা শ্রমশক্তির এমন একটি বৈশিষ্ট্য যা একটি পণ্যের মূল্যের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত থাকে যার এক কানাকড়িও শ্রমিককে দেওয়া হয় না, সবটাই আত্মসাৎ করে পুঁজিপতি। দেখা গেছে একজন পুঁজিপতি যে সময়ের জন্য (৮ঘণ্টা) শ্রমশক্তি করে এবং এর মূল্য পরিশোধ করে, তার চাইতে অনেক বেশি মূল্য উৎপাদে ধারিত থাকে। 

কি করে? যেমনটি আগেই বললাম পুঁজিপতি যে ৮ ঘণ্টার জন্য শ্রƒমশক্তি ক্রয় করে, তাতে দেখা গেছে একজন শ্রমিক মাত্র ২ ঘণ্টার মধ্যেই তাকে দেয় মূল্যের উৎপাদ বা পণ্য তৈরি করে ফেলে, বাকি থেকে যায় আরো ৬ ঘণ্টা। এই ৬ ঘণ্টার উদ্বৃত্ত সময়ে শ্রমিক যে পণ্য তৈরি করে, তার জন্য তাকে এক পয়সাও দেওয়া হয় না। উদ্বৃত্ত এই ৬ ঘণ্টায় উৎপাদিত পণ্যের মূল্যকেই উদ্বৃত্ত মূল্য বলে। একটা পণ্য তৈরি করতে সামাজিকভাবে আবশ্যকীয় সময়ের চাইতে এই সময় ঢের বেশি। একজন শ্রমিক ২ ঘণ্টায় তার শ্রমশক্তির সমান মূল্যের পণ্য তৈরি করে ফেললো, ধরুন, এর মূল্য ২ টাকা, বাকি ৬ ঘণ্টায় সে যে পণ্য তৈরি করলো তার মূল্য ৬ টাকা। তাহলে পণ্যটির মূল্য দাঁড়ালো ৮ টাকা। শ্রমিক পেয়েছে ২ টাকা। বাকি ৬ টাকার মধ্য তার যে স্থির পুঁজি যা দিয়ে সে কারখানা, কাঁচামাল, বিদ্যুৎ, পরিবহণ ইত্যাদিতে উশুল হয়, ধরুন আরো ৪ টাকা, তাহলে পুঁজিপতির নিট মুনাফা ২ টাকা। এটাই পুঁজিপতি পকেটে ঢুকায়। 

এটি কেবল একটি ৮ টাকার পণ্য দিয়ে মুনাফা লাভ করে যার ওপর শ্রমিকের কোনো ভাগ নাই। তাই একজন পুঁজিপতি আপ্রাণ চেষ্টা করে উদ্বৃত্ত মূল্য বাড়াতে। 

এবং সে এটা করতে গিয়ে হেন কাজ নাই যা করে না। এর সব ঝক্কি যায় শ্রমিকের ওপর দিয়ে। কার্ল মার্কস পুঁজিবাদের এই গুপ্ত রহস্য উদঘাটন করে ফেলেন এবং সমাজ বিবর্তনে সমাজতন্ত্রের রূপরেখা প্রদান করেন। মনে রাখতে হবে উদ্বৃত্ত মূল্য সৃষ্টি শ্রমশক্তির একটি বৈশিষ্ট্য যেমন কার্বোহাইড্রেট পুড়ালে পাই অবধারিত গ্লুকোজ। আইনস্টাইন আপেক্ষিক তত্ত্বের স্রষ্টা। এর মধ্য দিয়ে আমরা আলোর গতির সাপেক্ষে পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুর গতি মাপতে পারি এবং স্থান এবং কালকে শনাক্ত করতে পারি। এই মহাবিশ্বের উদ্ভব এবং বিকাশের আপেক্ষিক তত্ত্ব আমাদের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয় যা অলৌকিক যেকোনো ধারণাকে নাকচ করে দেয়। এই ৪ জন মানুষ প্রকৃতির সত্যকে প্রকাশ করে যে জ্ঞানকাণ্ড গড়ে তুলেছেন, তার মূল কথা হচ্ছে ইহজগতই সত্য এবং মানুষের জন্য আর অন্য কোনো জগৎ নাই। লেখক: ঔপন্যাসিক